গত তিন দিনের মেঘ আর বৃষ্টির দাপটে সারা দেশ থেকে দাবদাহ বিদায় নিয়েছে। এখন শুরু হচ্ছে কালবৈশাখীর দাপট। আজ সোমবার দুপুর থেকেই দেশের দক্ষিণ–পশ্চিমের জেলাগুলোতে ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ওই বাতাস দেশের মধ্যাঞ্চলের দিকে এগিয়ে আসছে। আজ রাতের মধ্যে ঝড়টি রাজধানীর দিকেও এগিয়ে আসতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আজ সন্ধ্যার পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে দমকা হাওয়া আর কিছুটা বৃষ্টির দাপট থাকতে পারে। তবে আগামীকাল সকাল থেকে আবারও রোদ বেড়ে গিয়ে গরম কিছুটা বাড়তে পারে। দুই দিন এ ধরনের আবহাওয়া থাকার পর বুধবার থেকে আবারও বৃষ্টি বাড়তে শুরু করবে। এর মধ্যে আজ থেকে আগামী কয়েক দিন বজ্রপাত থাকতে পারে। বিশেষ করে হাওর এলাকায় বজ্রপাতের পরিমাণ বছরের এই সময়টাতে বেশি থাকে, আগামী কয়েক দিন বজ্রপাত বেশি থাকতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, দেশের দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলে এরই মধ্যে মেঘ, বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া শুরু হয়ে গেছে। বিকেল থেকে রাতের মধ্যে রাজধানীর কয়েকটি স্থানে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে। তবে আগামী দুই দিন দিনে গরম বাড়তে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আজ দুপুর থেকে মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, নড়াইল, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, বাগেরহাট, খুলনা, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলোয় বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি শুরু হবে।

আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, গত শনি ও রোববার রাজধানীর আকাশে কালো মেঘ আর দমকা হাওয়ার যে দাপট ছিল, তা আজ সোমবার সকাল থেকে বিদায় নিয়েছিল। ফলে গতকালের তুলনায় আজ গরম কিছুটা বেশি ছিল।

এদিকে আজ সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলায় সকাল থেকে ঝুম বৃষ্টি হয়েছে। দেশের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে সিলেটে, ৫৩ মিলিমিটার। এ ছাড়া শ্রীমঙ্গলে ১৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এর বাইরে দেশের ১২টি জেলায় সামান্য বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির কারণে আজও দেশের বেশির ভাগ জায়গায় গরম তুলনামূলক কম ছিল।

গত ২ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া দাবদাহ এবার টানা ২০ দিন দেশের কোথাও না কোথাও ছিল। গত শুক্রবার ঈদের আগের দিন থেকে আকাশে মেঘ বেড়ে গরম কমতে থাকে। পরের দুই দিন তাপমাত্রা আরও কমে দাবদাহ সারা দেশ থেকেই বিদায় নেয়। গতকাল দেশের বিভিন্ন এলাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমে যায়।

রাঙামাটিতে কালবৈশাখীতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
গতকাল রোববার বেলা দুইটার দিকে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় শিলাবৃষ্টি ও কালবৈশাখীতে ফসল ও বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বোরো ধান পাকা ও আধা পাকা অবস্থায় এসেছে। এর মধ্যে শিলার আঘাতে ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ ধান নষ্ট হয়ে গেছে। তা ছাড়া আম, লিচু ও বাড়িঘরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর উপজেলার দুর্গম সাজেক ইউনিয়নে কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টির আঘাতে প্রায় এক শ বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শিলার আঘাতে ঘরের চালার টিন ফুটো হয়েছে, আবার কোনো কোনো ঘরের চালা ঝড়ে উড়ে গেছে। এতে অর্ধশতাধিক পরিবার বাড়িঘর হারিয়েছে।

বাঘাইছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কুন্ডল রায় প্রথম আলোকে বলেন, কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টির আঘাতে বঙ্গলতলী ও রুপকারী ইউনিয়নে প্রায় এক শ একর বোরো খেতের ৬০ শতাংশ পাকা ও আধা পাকা ধান নষ্ট হয়েছে। অনেক কৃষকের পুরো খেত নষ্ট হয়ে গেছে।

সাজেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অতুলাল চাকমা জানিয়েছেন, কালবৈশাখীতে তাঁর ইউনিয়নের চার এলাকায় প্রায় এক শ বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘরের চালা উড়ে গিয়ে ও শিলার আঘাতে চালা নষ্ট হওয়ায় অনেক পরিবার অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *