বিস্ময়কর গাছ গ্লিরিসিডিয়ার চাষ এখন বাংলাদেশে
প্রিয় প্রতিবেদন: প্রকাশ: ১২নভেম্বর২০২০
বর্তমানে সারা পৃথিবীতে ক্লাইমেট চেঞ্চ নিয়ে যে সচেতনতা তৈরি হয়েছে তার সহায়ক গাছ হিসেবে গ্লিরিসিডিয়া বিবেচিত হচ্ছে। এর বৈজ্ঞানিক নাম গ্লিরিসিডিয়া সেপিয়াম। এই গাছটি নাইট্রোজেন ফিক্সার হিসাবে সবেচেয় পরিচিত। যা জমির উর্বরা শক্তি বাড়িয়ে দেয়। বাতাস থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শুয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে এই গাছ অগ্রগণ্য। এই গাছের পাতা এবং শেকড় ব্যাপক ভাবে কার্বন ধারণ করতে পারে। একই সঙ্গে গ্লিরিসিডিয়া পাতা ভালো পেস্টিসাইড হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অনেক গাছের ফাঙ্গাস দূর হয়ে যায় যদি গাছের গোড়ায় গ্লিরিসিডিয়ার পাতা দেয়া হয়। প্রাকৃতিক সার হিসেবেও এই গাছের পাতার তুলনা হয় না। এক হিসেবে দেখা গিয়েছে, ৩৫ কেজি গ্লিরিসিডিয়ার পাতা যদি কোনো নারকেল গাছের গোড়ায় দেয়া হয় তবে সেই গাছটিতে আর কখনোই ইউরিয়া সার দেয়ার প্রয়োজন হয় না। গবাদি পশুখাদ্য হিসেবেও এর পাতা অনেক দেশে ব্যবহৃত হয়। প্রাকৃতিক বেড়া হিসেবে এই গাছের ব্যবহার বহু দিনের।
আমেরিকাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গ্লিরিসিডিয়া দেখা যায়। এশিয়ায় শ্রীলংকা, ইন্দোনেশিয়ায় ব্যাপক ভাবে চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশে এই গাছ তেমন পরিচিত নয়। ঢাকার রমনা পার্কে একটি গ্লিরিসিডিয়া গাছ আছে। এটিকে ফুল গাছ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। গোলাপি রঙের লম্বাটে অপূর্ব সুন্দর এই গাছের ফুলের বাংলা নাম বসন্তমঞ্জুরী। সাভারে অবস্থিত বিএলআরআই-এ কিছু গ্লিরিসিডিয়া গাছ পরীক্ষামূলক ভাবে লাগানো হয়েছে।
শ্রীলংকায় গ্লিরিসিডিয়া নিয়ে ব্যাপক গবেষণা ও মাঠ পর্যায়ে কাজ হচ্ছে। সেখানে ব্যক্তি পর্যায়ে এই গাছ লাগানোর জন্য গণসচেতনতা তৈরি করা হচ্ছে। শ্রীলংকায় চা, রাবার ও নারকেলের পর চতুর্থ সর্বোচ্চ অর্থকরী গাছ হিসেবে গ্লিরিসিডিয়া বিবেচিত হয়। সেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কয়লার বিকল্প জ্বালানি হিসেবে গ্লিরিসিডিয়া গাছের ডাল ব্যবহার করা হচ্ছে জাতিসংঘের এসডিজি-বান্ধব গাছ হিসেবে। ইওরোপ, জাপানসহ বিভিন্ন্ দেশে এর চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
এই গাছটি দ্রুত বাড়ে এবং কমপক্ষে পঞ্চাশ বছর বাঁচে বলে বনায়নে এর ভূমিকা অনেক। বীজ থেকে এবং গাছের কাটা ডাল থেকেও এর বিস্তার সম্ভব। এই গাছ পানির কোনো ক্ষতি করে না। এটিকে বায়ো-গ্যাস ও বায়ো-ওয়েল তৈরিতেও ব্যবহার করা হচ্ছে।
এই বিস্ময়কর গাছ গ্লিরিসিডিয়া বাংলাদেশে প্রথম বারের মতো ব্যাপক উৎপাদন করা হচ্ছে। ২০১৫ সাল থেকে খুলনার ডুমুরিয়া থানায় গড়ে তোলা হয়েছে গ্লিরিসিডিয়া বাগান। পরীক্ষামূলক ভাবে প্রাথমিক অবস্থায় প্রায় আট একর জমিতে এক লাখেরও বেশি গ্লিরিসিডিয়া গাছ লাগানো হয়েছে। জানা যায়, এটি শুধু বাংলাদেশেই নয়, গ্লিরিসিডিয়ার পরিকল্পিত বাগান হিসেবে উপমহাদেশেও প্রথম। এর উদ্যোক্তা মোহাম্মদ মাহমুদুজ্জামান একজন সিনিয়র সাংবাদিক। তিনি জানান, ‘পৃথিবী জুড়ে যে ক্লাইমেট চেঞ্জের প্রভাব শুরু হয়েছে বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। তাই প্রকৃতি বান্ধব গাছ হিসেবে গ্লিরিসিডিয়ার চাষ খুব প্রয়োজন। শ্রীলঙ্কাসহ পৃথিবীর নানা দেশে সরকারি ও বেসরকারি ভাবে গ্লিরিসিডিয়ার চাষ হচ্ছে।’
এই ধরনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে এই বিষয়ের বিশেষজ্ঞগণ বাংলাদেশে ব্যাপক ভাবে গ্লিরিসিডিয়া চাষের গুরুত্ব তুলে ধরে সরকার ও বেসরকারি পর্যায়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।